Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ট্রফি কার, রোনালদো না সালাহর

ম্যাচের পর কেঁদেই যাচ্ছিলেন রাদজা নাইনগোলান। তার সঙ্গেই কাঁদছিলেন ৬৭ হাজার রোমার দর্শক। মাত্র কয়েকদিন আগেই রোমের স্টেডিও অলিম্পিকে দেখেছিল স্বপ্নের রাত, অঘটনের রাত। বার্সিলোনাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে যাওয়ার সেই ম্যাচ নিঃসন্দেহে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ঠিক ২২ দিনের মাথায় সেই রাত ফিরতে পারত আবারও। হল না।
বলা ভাল, হতে দিলেন না তিনি। দামির স্কোমিনা। স্লোভেনিয়ার এই রেফারি যথেষ্ট অভিজ্ঞ। গত বছর ইউরোপা লিগের ফাইনাল খেলিয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালেও চতুর্থ রেফারি হিসেবে কাজ করেছেন। আসন্ন বিশ্বকাপেও তাকে দেখা যাবে। কিন্তু বুধবার (২ মে) রাতে তিনি এমন কিছু ঐতিহাসিক ভুল করে বসলেন, যা রোমাকে ফাইনালে ওঠা থেকে বঞ্চিত করল। দুটি নিশ্চিত পেনাল্টি রোমাকে দিলেন না। অফসাইডে একটি গোল বাতিল করলেন। হয়তো তিনটে ভুল, কিন্তু ম্যাচের পার্থক্য ঘটানোর জন্য ওইটুকুই ছিল যথেষ্ট। 
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল থেকে রোমা বিদায় নিল লিভারপুলের কাছে দুই ম্যাচ মিলিয়ে ৭-৬ ফলে হেরে। অথচ আলাদা করে ধরলে  ইতালির ক্লাবই বুধবার ৪-২ জিতল। রোমার স্পোর্টিং ডিরেক্টর মঞ্চির দাবি, ‘‘আমরা দু’টো পরিষ্কার পেনাল্টি পাইনি। ওদের একটা নিশ্চিত লাল কার্ডও দেখানো হয়নি।’’
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও অন্যায় ভাবে অফসাইড দেওয়া হয় সারউইকে। সঙ্গে লিভারপুল গোলরক্ষক লরিস কারিউস তার পা টেনে ফেলে দেন। এই আক্রমণ থেকে গোলও হয়েছিল। রোমার বক্তব্য, অফসাইড তো হয়ইনি আর হলেও পেনাল্টি তাদের প্রাপ্য। সঙ্গে কারিউসকেও লাল কার্ড দেখানো উচিত ছিল রেফারির। তবে সবথেকে বেশি প্রতিবাদ হয়েছে খেলার এক ঘণ্টার মাথায় লিভারপুলের ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আর্নল্ড পরিষ্কার বক্সে হাতে বল লাগালেও তা রেফারির চোখ এড়িয়ে যাওয়ায়। ফলে এবারের মতো সেমিফাইনালে থেমে গেল ড্যানিয়েলে ডিরোসিদের দৌড়।
মারাত্মক হতাশ রোমার প্রেসিডেন্ট জিম পালোত্তার প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ ভাবে চলতে দেওয়া যায় না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও যদি ‘ভিএআর’ না থাকে তাহলে পুরো ব্যাপারটাই একটা প্রহসনে পরিণত হয়।’’ এক মাস আগেই জুভেন্তাস খেলার একেবারে শেষ লগ্নে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিতর্কিত পেনাল্টি গোলের জন্য প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিয়েছিল। যে ঘটনা নিয়ে জুভেন্তাস প্রেসিডেন্ট আন্দ্রিয়া অ্যাগনেলি বলেছিলেন, ‘‘এই ধরনের ভুল এড়ানোর জন্য নতুন প্রযুক্তি এসে গিয়েছে। আমরা জানি উয়েফা ফুটবলে ‘ভিএআর’ আনার বিরোধী না। কিন্তু প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যার জন্যই এটা চালু করতে পারছে না। উয়েফার উচিত দ্রুত সমস্যার সমাধান করে এটা চালু করা।’’
উয়েফার সমস্যা ইউরোপের সব দেশের লিগে এখনও ‘ভিএআর’ চালু না হওয়ায়। যেমন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এখনও পুরনো নিয়মেই খেলা হচ্ছে। কিন্তু এ সবের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো প্রতিযোগিতায় কেন নতুন প্রযুক্তি আনা যাবে না বুঝতে পারছেন রোমার কোচ ইউসেবিও দি ফ্রান্সিকোও। আর ক্রুদ্ধ রোমা প্রেসিডেন্টের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মানছি রেফারির কাজটা কঠিন। কিন্তু তাঁর পরের পর ভুলে এ ভাবে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেওয়াটা আরও বেশি বেদনার। সব চেয়ে খারাপ লাগল শেষ হ্যান্ডবলের ঘটনাটা। সারা পৃথিবার লোক সেটা দেখতে পেল অথচ কী করে রেফারির চোখ এড়িয়ে গেল বুঝলাম না।’’
১৯৮১ সালের পর আবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলতে দেখা যাবে রিয়াল মাদ্রিদ এবং লিভারপুলকে। সেবার অ্যালান কেনেডির একমাত্র গোলে জিতেছিল লিভারপুল। তাই রিয়েলের মাথায় প্রতিশোধের ভাবনা থাকবেই। লিভারপুলের জন্যেও চিন্তা থাকছে। যতই আক্রমণভাগ শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের ডিফেন্স ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, করিম বেনজিমাদের আটকাতে পারবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। তবে একটা ব্যাপারে এখনই নিশ্চিত থাকা যায়, কিয়েভের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে কিন্তু গোলবন্যা দেখা যাবেই।‌‌

Post a Comment

0 Comments