গত গ্রীষ্মে একজন নতুন স্ট্রাইকার আনার জন্য বেশ চেষ্টা করছিল জুভেন্টাস। ইন্টার মিলানের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দিকে দলে নিয়ে আসা হবে, এমনটাই ভেবে রেখেছিলেন জুভেন্টাসের কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইকার্দি নয়, জুভেন্টাস দলে নিয়ে আসে আরও বড় তারকাকে— যার নাম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। কিন্তু কীভাবে ইকার্দিকে না এনে রোনালদোর মতো ‘বড় মাছ’ শিকার করতে পারল জুভ? সেই চমকপ্রদ কাহিনির আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেছেন জুভেন্টাসের স্পোর্টিং ডিরেক্টর ফাবিও পারাতিচি।
রোনালদোর মুখপাত্র হোর্হে মেন্ডেজ নিজেই পারাতিচির কাছে এসে রোনালদোকে কেনার ব্যাপারে বলেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘পুরো ব্যাপারটা শুরু হয় যখন আমরা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলি। যথারীতি মেন্ডেজের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমার। মেন্ডেজকে বললাম, “ক্রিস্টিয়ানো তো অসাধারণ কিছু গোল করল!” এরপর সে আমাকে বলল, “তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না, রোনালদো কিন্তু জুভেন্টাসের হয়ে খেলতে চায়। ব্যাপারটাকে হেসে উড়িয়ে দিয়ো না, আমি ঠাট্টা করছি না!”’
প্রথম দেখায় রোনালদোকে নিয়ে এতটুকুই কথা হয় পারাতিচি আর মেন্ডেজের মধ্যে। এরপর পর্তুগিজ রাইটব্যাক হোয়াও ক্যানসেলোকে দলে নিয়ে আসার জন্য আবার মেন্ডেজের সঙ্গে দেখা করেন পারাতিচি। সেখানেও রোনালদোর জুভেন্টাসে আসার আগ্রহ সম্পর্কে মেন্ডেজ পারাতিচিকে জানান, ‘মেন্ডেজ আমার দিকে তাকাল, আর তার দৃষ্টি দেখে আমি বুঝলাম ও আসলেই ঠাট্টা মশকরা করছে না। মেন্ডেজ আমাকে বলল, “দেখো আমি তোমাকে আবারও বলছি, রোনালদো জুভেন্টাসে আসতে চায়। শুধুমাত্র জুভেন্টাসে। রোনালদো সব সময় জুভেন্টাসের মতো ঐতিহাসিক দলগুলোর হয়েই খেলতে চায়, আর এমনিতেও ও কখনো ইতালিয়ান লিগে খেলেনি। জুভেন্টাসের হয়ে সে ইতালিয়ান লিগ জিততে চায়।”’ এরপর পারাতিচি মেন্ডেজের কাছে কয়েক দিন সময় চান চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার জন্য, ‘আমি মেন্ডেজের কাছে কিছুদিন সময় চাইলাম, মেন্ডেজ আমাকে বলল, আমরা যদি রোনালদোকে নেওয়ার ব্যাপারে অপারগতা জানাই, কেবলমাত্র তখনই মেন্ডেজ অন্যান্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ করবে রোনালদোকে নেওয়ার জন্য।’
রোনালদোকে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন কি করবেন না, এ নিয়ে বেশ কিছুদিন দোলাচলে ছিলেন পারাতিচি, ‘কিছুদিন বেশ চিন্তায় কেটেছে আমার। অনেক দিক নিয়ে ভাবছিলাম আমি। গঞ্জালো হিগুয়েইনকে এমনিতেই বিক্রি করে দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা করছিলাম আমরা। তার জায়গায় যদি রোনালদোকে আনতে পারি, তাহলে ব্যবসায়িক ও দলগত দিক দিয়ে আমরা অনেক লাভবান হব। এটা ভেবে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, যা হওয়ার হবে, অন্তত রোনালদোকে আনার চেষ্টা তো করে দেখি!’
প্রথমে জুভেন্টাসের বাকি কর্তাব্যক্তিদের এ ব্যাপারে কিছুই জানাননি বলে জানিয়েছেন পারাতিচি, ‘এ পর্যন্ত আমি ব্যাপারটা নিজের মাঝেই রেখেছি। কাউকে কিচ্ছু জানাইনি। মধ্যে একদিন মেন্ডেজের সঙ্গে দেখা করে রোনালদোর বেতন ও ট্রান্সফার ফি সম্পর্কে জেনে নিলাম। আমি ভেবে দেখলাম, দল থেকে বুফনের মতো কিংবদন্তি একজন খেলোয়াড় চলে যাচ্ছে। টানা সাতবার লিগ জেতার পর খেলোয়াড়দেরও আর লিগ জেতা নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। ওদিকে অনেক চেষ্টা করেও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারছি না আমরা। সবকিছু মিলিয়ে আমার মনে হলো এই দলটাকে উজ্জীবিত করার জন্য কিছু একটা করার দরকার। সামনেই জুভেন্টাসের বোর্ড মিটিং ছিল, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম সেই বোর্ড মিটিংয়ে সভাপতি আন্দ্রেয়া আগনেল্লি ও আরেক ডিরেক্টর পাভেল নেদভেদকে আমার পরিকল্পনার ব্যাপারে জানাব।’
জুভেন্টাসের বাকি ডিরেক্টররা পারাতিচির প্রস্তাব শুনে হেসে উড়িয়ে দেবেন, এমনটাই ভেবেছিলেন তিনি, ‘আমি আন্দ্রেয়া আর পাভেলকে বললাম যে দেখ, আমার একটা পরিকল্পনা আছে। পরিকল্পনাটা চূড়ান্ত কিছু নয়, তাই আমি অনুরোধ করব তোমরা আমার কথা শুনে হেসে উড়িয়ে দেবে না, যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা নিয়ে অন্তত একটু হলেও ভাববে। আমরা বহুদিন ধরেই চাইছি একটা স্ট্রাইকার আনতে। ইন্টারের স্ট্রাইকার মাউরো ঐকান্তিকে আমরা আনতে চাইলেও সে যে জুভেন্টাসে এসে ঠিকঠাক মানিয়ে নিতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আমি চাইছি আমরা যেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে দলে আনার চেষ্টা করি। কথাটা শোনার পর আন্দ্রেয়া আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল।’
প্রথমে হাসলেও পরবর্তীতে সভাপতি পারাতিচির পরিকল্পনা শুনে রোনালদোকে দলে আনার ব্যাপারে আগ্রহী হন, ‘আন্দ্রেয়া সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি পাকা ব্যবসায়ীও বটে। তিনি বুঝলেন রোনালদোকে দলে আনলে ব্যবসায়িক দিক দিয়ে জুভেন্টাস যেমন শক্তিশালী হবে, মাঠের মধ্যেও দলের শক্তি বাড়বে বহুগুণ। তাই সেদিন বিকেলেই তিনি আমাকে মেন্ডেজের সঙ্গে চূড়ান্ত কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেন।’
এভাবেই জুভেন্টাসে আসেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, আর কপাল পোড়ে দুই আর্জেন্টাইন তারকা গঞ্জালো হিগুয়েইন আর মাউরো ইকার্দির!-প্রথম আলো
0 Comments